মানুষের পেটে হজম প্রক্রিয়ায় গ্যাস উৎপন্ন হয়, তবে স্বাভাবিক অবস্থায় এ গ্যাস আবার পেটে নাড়ির মাধ্যমে শোষিত হয়ে যায়। ফলে মানুষ তার পেটে গ্যাসের অনুভূতি টের পায় না। যখন পেটে অত্যধিক গ্যাস সৃষ্টি হয় তখন গ্যাসের জন্য পেট ফেঁপে যেতে পারে, পায়ুপথে অথবা ঢেঁকুর হিসেবে গ্যাস বের না করা পর্যন্ত ব্যক্তি অস্বস্তিবোধ করতে থাকেন এবং গ্যাস বের হলে ব্যক্তি বেশ স্বস্তিবোধ করেন। যাদের পেটে গ্যাস উৎপন্ন হয় তাদের প্রায় সবারই একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মে থাকে যে তিনি গ্যাস্ট্রিকে ভূগছেন। এটা ঠিক নয়, গ্যাস্ট্রিক বলতে ডাক্তারি ভাষায় গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডিওডেনাল আলসার এসব অসুস্থতাকে বুঝানো হয়। এ ধরনের অসুস্থতা সাধারণভাবে রোগীর পেটে ব্যথা অনুভূত হয়, অনেক সময় ব্যথা বেশ তীব্র আকার ধারণ করে এবং ব্যথা দীর্ঘ সময় (কয়েক ঘণ্টা) ধরে বিদ্যমান থাকে। এ ধরনের ব্যথার সময় রোগীর সারা দেহ ঘেমে ভিজে যেতে পারে, রোগীর বমি হতে পারে, অনেকে বমি করার পর কিছুটা সুস্থতা অনুভব করতে পারেন। এন্টাসিড, রেনিটিডিন অথবা ওমিপ্রাজল জাতীয় মেডিসিন ব্যবহারে ব্যথা নিরাময় হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক জাতীয় অসুস্থতায় রোগীর পেটে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে তবে তার পরিমাণ খুব বেশি হয় না। তাই পেটে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন হলে গ্যাস্ট্রিক ভেবে উপরোল্লিখিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার করলে তা থেকে আরোগ্য লাভ করার সম্ভাবনা কম। পেটে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার মূল কারণ বদহজম, মেদভুঁড়ি, অধিক পরিমাণে শাকসবজি গ্রহণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে জীবাণু সংক্রমণ হওয়া, পেটে পানি জমা হওয়া, হার্ট ফেইলুর, লিভারের সমস্যা, কিডনি ফেইলুর, রক্তশূন্যতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি ইত্যাদি। গ্যাস উৎপাদন বেশি হলে যারা হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের বুকের ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং গ্যাস বের হলে অস্বস্তি ও বুকের ব্যথা দুই-ই কমে যেতে পারে। হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের কমতি দেখা দিলে অক্সিজেনের অভাবে হৃৎপিণ্ডের আক্রান্ত অংশে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন হয়ে ব্যথার সৃষ্টি করে থাকে। এ ব্যথা তীব্র ধরনের ব্যথা, সাধারণভাবে পরিশ্রমকালীন এ ব্যথা শুরু হয়, বিশ্রাম গ্রহণ করলে খুব অল্প (কয়েক মিনিট) সময়ের মধ্যে ব্যথা নিরাময় হয়ে যায়, এ ধরনের ব্যথাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলে অভিহিত করা হয়। এনজিনার ব্যথা পানি খেলে, এন্টাসিড খেলে, অন্যসব গ্যাস্ট্রিকের মেডিসিন খেলে, বিশ্রাম নিলে অথবা কোনো কিছু ব্যবহার না করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যথা নিরাময় হয়ে যাবে। এনজিনার ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড় করার মতো উপসর্গ থাকতে পারে। ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, এতে বুকে ভারভার ভাব, ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাস অথবা বুক জ্বালার মতো অনুভূতি হয়ে থাকে। অনেক সময় পেটের গ্যাস বের করে দিলেও কিছুটা স্বস্তি অনুভূত হয়। এনজিনার ব্যথায় নাইট্রোসল জাতীয় স্প্রে জিহ্বার নিচে প্রয়োগ করলে তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যথা উপশম হয়ে যায়। উচ্চরক্তচাপ, হার্টের রক্তনালিতে রক্তপ্রবাহের প্রতিবন্ধকতা (ব্লক), থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তউচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, হার্ট ফেইলুর, উত্তেজক জাতীয় বস্তু গ্রহণ, হার্টের ভাল্বের সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির প্রদাহ ইত্যাদি এনজিনার মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত। এনজিনা এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা অনেক সময়ই আলাদা করা বেশ ঝামেলাপূর্ণ তাই সাধারণ মানুষ এনজিনাকে গ্যাস্ট্রিক ভেবে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করতে থাকেন এবং যখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে আসেন তখন দেখা যায় যে এনজিনার অসুস্থতা অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ করা শ্রেয়।
ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট), সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।